স্রষ্টা মানে আল্লাহ। হিন্দুরা বলেন ভগবান। খ্রিস্টানরা বলেন গড। পারসিক
অগি্ন উপাসকরা বলত খোদা। এগুলো মূলত মৌলিক নাম। এর বাইরেও দেশে দেশে সখ্য
গুণবাচক নাম রয়েছে। আলোচ্য লেখায় আমরা আল্লাহ শব্দটি ব্যবহার করব।
সব ধর্মের বিশ্বাসীরাই মনে করেন জগৎসমূহের সৃষ্টিকর্তা হলেন আল্লাহ। এ অনন্ত মহাবিশ্বের সব প্রাণী ইচ্ছায় হোক কিংবা অনিচ্ছায় হোক আল্লাহর আওতার বাইরে যেতে পারে না। আল্লাহ তার সৃষ্টির মধ্যেই স্বকীয় সত্তায় উপস্থিত। চিন্তাশীলদের কাছেও তিনি সমুজ্জ্বল। তিনি তার সৃষ্টির মধ্যে কর্মকুশলতায়, সৌন্দর্য, সৌকর্য এবং সৌজন্যবোধের অপার মহিমায় এমনভাবে ভাস্বর হয়ে আছেন যা মানুষমাত্রই বুঝতে পারে এবং সে মতে তারা তাদের কর্মপদ্ধতি ঠিক করে নেয়। আল্লাহ তাদেরকেই বলেছেন দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকামী মানুষ।
আমাদের রাজনীতি, সমাজনীতি এবং পারিবারিক মূল্যবোধের জায়গাটি বার বার আঘাতপ্রাপ্ত হয় প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তিবর্গের দ্বারা। যিনি ক্ষমতাশালী প্রধান ব্যক্তিতে পরিণত হন, তার প্রধান ও প্রথম দায়িত্বই হয় অপরাধ, অপমান ও লাঞ্ছিত করে আত্দতৃপ্তি লাভের অপপ্রয়াস চালানো। ফলে একজন বড় হতে থাকে এবং অন্যরা ছোট হতে থাকে। বড় হতে হতে তার আকাঙ্ক্ষা আকাশের মালিক হওয়ার স্বপ্ন পর্যন্ত পেঁৗছে। অন্যদিকে যিনি ছোট হন, তিনি ছোট হতে হতে পা লেহনকারী কুকুর না হয়ে ক্ষান্ত হন না। প্রথমে বাধ্য হয়ে হয়তো ছোট হন কিন্তু পরে ইচ্ছা করেই ছোট হন। নিজেকে বড় করার জন্য মানুষের সবচেয়ে জঘন্য হাতিয়ার হলো অত্যাচার। কখনো অত্যাচার করা হয় অস্ত্রের মাধ্যমে আবার কখনো করা হয় ঘুষের মাধ্যমে। আল্লাহপাক আমাদের জিহ্বা তৈরি করেছেন একখণ্ড নরম ও সাবলীল মাংস দিয়ে। কিন্তু আমরা এই নরম জিহ্বা দিয়ে প্রায়ই কুড়াল, কোদাল কিংবা তরবারির কাজ করে থাকি।
হিন্দুরা যে তেত্রিশ কোটি দেবতা বিশ্বাস করে থাকেন তাদের অন্যতম শ্রীকৃষ্ণ। মহাভারতে আমরা শ্রীকৃষ্ণের উপাখ্যান জেনেছি। শ্রীকৃষ্ণ বলেন, মানুষ অত্যাচার করতে করতে এক সময় নিজেকে ভগবান ভাবতে শুরু করে। অন্যদিকে মানুষ অত্যাচারিত হতে হতে যখন আর কোনো আশ্রয় পায় না তখন অত্যাচারীদের ভগবান ভাবতে শুরু করে। পরিস্থিতি যখন এরূপ হয় তখনই অবতার হিসেবে আমি আবির্ভূত হই। অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব হয়। এখানে আবির্ভাব অর্থটি রূপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ কখনো সশরীরে স্রষ্টার প্রতিনিধি আসেন আবার কখনো স্রষ্টার বিচার জমিনে আবির্ভূত হয়। ইংরেজিতে আমরা এ বিচারকে বলি Devine Justice। জমিনে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় সৃষ্টি করে মন্দ শাসকরা। তারা তাদের অযোগ্য সঙ্গী-সাথীদের দ্বারা যুগপৎভাবে বহুমুখী অত্যাচারের মাধ্যমে জনজীবন অতিষ্ঠ করে তোলেন। মন্দ শাসকের সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো তার অযোগ্য সঙ্গী-সাথী বা পাত্রমিত্র। আর এখানেই আল্লাহর শিক্ষা কিন্তু ভিন্ন। প্রকৃতিতে আল্লাহ তার সৃষ্টির মধ্যে এমন ইকো ব্যালেন্স করেছেন যে, সহজেই তার মাহাত্দ্য, সৌন্দর্যপ্রিয়তা এবং সৌজন্যতার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠে। উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
প্রকৃতির অন্যতম সৌন্দর্য হলো ফুল। সৌন্দর্যমণ্ডিত পুষ্পকাননে পুরুষ ফুল এবং স্ত্রী ফুলের মধ্যে পরাগায়ন ঘটানোর জন্য আল্লাহ প্রজাপতিকে নিয়োগ করেছেন। ফুলের ওপর যখন হাজার হাজার প্রজাতির প্রজাপতি সকাল-সন্ধ্যা উড়ে বেড়ায় সেই দৃশ্য চিত্রায়িত করে কেউ হলেন মহান চিত্রশিল্পী, চলচ্চিত্রকার কিংবা নিদেনপক্ষে ফটোগ্রাফার। কবিরা অনাদিকাল থেকে কবিতা লিখছেন। লেখকরা লিখছেন গল্প, উপন্যাসসহ হরেক রকম সাহিত্য। অন্যদিকে মানুষের মলমূত্র ধ্বংস করার জন্য আল্লাহপাক যেসব পোকা-মাকড় বা জীবাণু সৃষ্টি করেছেন সেগুলোর আকার-আকৃতি কল্পনা করুন তো! মলমূত্রের পোকা-মাকড় যদি ফুলের পরাগায়ন ঘটাত এবং প্রজাপতি যদি মানুষের মলমূত্র খেত- এ জঘন্য দৃশ্য দেখে কেউ কি আল্লাহর প্রশংসা করত? এবার একটু প্রাণীকুলের দিকে তাকাই। যেসব বন্যপ্রাণী হিংস নয় এবং দেখতে সুন্দর তাদের খাদ্যাভ্যাস, বসবাস করার পদ্ধতি কিন্তু অন্যদের থেকে আলাদা। যেমন হরিণ। কিন্তু যাদের আমরা ঘৃণা করি সেই শূকর কিংবা কুকুর কি কি খায়? তাদের খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা এবং ব্যবহারই তাদেরকে আমাদের কাছে ঘৃণিত করে তোলে।
এবার মানুষ প্রসঙ্গে আসি। মানুষ যখন তার মানবীয় গুণাবলীর পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারে তখন জমিন থেকে আসমান পর্যন্ত তার প্রশংসা ছড়িয়ে পড়ে। জমিনের মানুষ প্রশংসা করে। আসমানে করেন ফেরেশতারা। তিনি যখন জমিনে হাঁটাচলা করেন তখন অপরাপর সৃষ্টি তার জন্য দোয়া করতে থাকে। অথচ এ একই মানুষই যখন মন্দ কাজ করতে করতে এমন পারঙ্গমতা অর্জন করে যে, ইবলিশ শয়তানও স্তব্ধ হয়ে ভাবতে থাকে 'ও' এ শয়তানি শিখল কি করে। মানুষের মধ্যে ইদানীং বিশ্বব্যাপী সমকামিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ সমকামিতা কি জিনিস তা শয়তানও জানে না। এমনকি শিয়াল, কুকুর, গরু-গাধাও সমকামিতা করে না। মানুষের দুটি খারাপ দিক নিয়েই সাধারণত বেশি আলোচনা হয়- একটি আচরণগত, অর্থাৎ ব্যবহারিক। সাধারণ বাংলায় বলে ওর ব্যবহার খারাপ বা চোপা খারাপ। অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে চোখ পাকিয়ে মানুষকে কষ্ট দেয়। অন্যটি হলো আজেবাজে এবং অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করে মানুষকে কষ্ট দেয়। লোকে বলে- ওর চোপা খারাপ। অর্থাৎ মুখ খারাপ। কিন্তু মানুষের সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো অশ্লীল চিন্তা বা চেতনা। বিশ্বের তাবৎ মাখলুকাত অর্থাৎ সৃষ্টিকূলের মধ্যে কেবলমাত্র মানুষই স্বাধীনভাবে ভালো-মন্দ চিন্তা করার অধিকারী। অবচেতন মনে মানুষ যেসব খারাপ চিন্তা করে তা-ই পরবর্তীতে সে কোনো না কোনোভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করে। এটা যে কত ভয়াবহ ও জঘন্য হতে পারে তার একটি উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে। এটি সাম্প্রতিককালের বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী কলঙ্কময় ঘটনাগুলোর একটি। ঘটেছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে। একটি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে কয়েকজন কোরীয় ও চীনা যুবক থাকেন। সামনের ফ্ল্যাটে থাকেন আরব দেশীয় একজোড়া দম্পতি। তাদের ছিল পাঁচ বছরের একটি অনিন্দ্যসুন্দরী কন্যাসন্তান। এ নাবালিকা কন্যাটি প্রতিদিন বিকালে অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের সামনের পার্কটিতে অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে খেলাধুলা করত। কোরীয় ও চাইনিজ যুবকরা প্রায়ই বাচ্চাদের খেলা দেখত এবং এক পর্যায়ে ওই বাচ্চাটির প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হলো। বাচ্চাটির ছন্দময় গতি অসাধারণ সৌন্দর্য এবং সুন্দর স্বাস্থ্যের দিকে তারা বিশেষভাবে নজর দিল। নিজেরা বাচ্চাটিকে নিয়ে অনেক আলোচনা করল এবং মনে মনে ভাবল এই সুন্দর বাচ্চাটির মাংস খেতে না জানি কত মজা লাগবে। যে রকম চিন্তা সেই রকম কাজ। তারা সুযোগমতো বাচ্চাটিকে অপহরণ করল এবং ঠিকই জবাই করে তার মাংস রান্না করল এবং শেষমেশ খেলো। ওই যুবকদের একজনের হঠাৎ করেই পেট ব্যথা শুরু হলো এবং যথারীতি হাসপাতালে নেওয়া হলো। ডাক্তার প্রচলিত ওষুধ দিয়ে কিছুতেই ব্যথা উপশম করতে পারছিলেন না। অবশেষে বমি করানো হলো। ফলে পেটের ভেতর থেকে পরিপাক না হওয়া খাদ্যদ্রব্য বের হয়ে এলো, যার মধ্যে ছিল ওই শিশুটির মাংস। পরবর্তীতে ডাক্তাররা পরীক্ষার মাধ্যমে যখন জানতে পারলেন, মাংসের টুকরাগুলো মানুষের তখন পুলিশে খবর দিলেন এবং আসল সত্য এমনি করেই প্রকাশ হয়ে পড়ল বিশ্বব্যাপী।
মানুষের এই চিন্তা এবং আচরণগত ভিন্নতা নির্ণীত হয় এবং নিয়ন্ত্রিত হয় জিনের মাধ্যমে। জিন মানে এক ধরনের জীব কোষ, যা কিনা হাজার হাজার বছর ধরে মানব শরীরে বংশপরম্পরায় বাহিত হয়ে থাকে। এ জন্য বড় কোনো পদ বা পদবিতে ভালো বংশের লোক খোঁজা হয়। কারণ জেনেটিক থিওরি অনুযায়ী ভালো জিনের অধিকারী মানুষ খারাপ কাজ করতে পারে না। অন্যদিকে জিনগত ত্রুটি থাকলে মানুষ তার প্রভাবে খারাপ কাজটি এক সময় না একসময় করে ফেলবেই। অপরাধ বিজ্ঞানে (Criminology) একটি অধ্যায় রয়েছে By born Criminal- বাংলায় অর্থ দাঁড়ায় 'যাদের জন্মই হয় অপরাধ করার জন্য'। এই থিওরি মতে, অপরাধীরা তাদের শরীরে অপরাধ-সংক্রান্ত জিন বহন করার পাশাপাশি কিছু বিশেষ শারীরিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়ে থাকে। যেমন এদের মুখমণ্ডল, ঠোঁট, আঙ্গুলের আকৃতি, নখ, চোখ, চোখের ভ্রু, পায়ের গঠন ইত্যাদি অস্বাভাবিক হয়ে থাকে। এসব লোক কখনো কখনো পেশাদার অপরাধী হিসেবে কাজ করে আবার কখনো কখনো ভদ্র বেশে সমাজের অপরাপর মানুষের সঙ্গে সাধারণ বেশে মিলে-মিশে থাকে। কিন্তু সময় ও সুযোগ বুঝে সে তার অপরাধমূলক কাজটি ঠিকই করে বসে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় এ প্রকৃতির মানুষ রাষ্ট্রক্ষমতার শীর্ষ পর্যায়ে বসলে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে আফগানিস্তানে হঠাৎ করেই একজন পেশাদার ডাকাত রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে বসে। নাম তার দস্যু বাচ্চা ই সাক্কো। এমন অদ্ভুত ঘটনা ইতিহাসে খুব কমই ঘটে। এ ডাকাত যখন আফগানিস্তানের শাসক হলো তখন সারা দেশকে একটি পাগলা গারদ বানিয়ে ফেলল। সে লেখাপড়া জানত না। শহরের আধুনিক জীবনযাপন সম্পর্কেও তার কোনো ধারণা ছিল না। মূলত দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে পথের বাঁকে বাঁকে ওত পেতে থেকে সে ডাকাতি করত। এভাবেই সে হঠাৎ কাবুলে উপস্থিত হয়। সেখানে তখন চলছিল দারুণ বিশৃঙ্খলা। ডাকাত দল হাঁটতে হাঁটতে রাজপ্রাসাদের দিকে এগুতে থাকে এবং কেবলমাত্র ডাকাতির উদ্দেশ্যেই অনেকটা অরক্ষিত প্রাসাদে ঢুকে পড়ে এবং আরব্য উপন্যাসের আলী বাবার মতো সিংহাসনে গিয়ে বসে। কিন্তু সিংহাসনে বসেই সে লাফ দিয়ে সরে আসে। বসার স্থানটিকে আরামদায়ক করার জন্য স্প্রিং লাগানো ছিল। ফলে দস্যু সাক্কো যখন স্প্রিংয়ের গদিওয়ালা সিংহাসনে লাফ দিয়ে বসল তখন গদির ভেতরকার স্প্রিংগুলো তাকে সজোরে ঝাঁকি মারল। ওরে বাবারে বলে সে লাফ দিয়ে সিংহাসন থেকে সরে এলো। মনে করল সিংহাসনের মধ্যে ভূত রয়েছে। ডাকাত সর্দার সাক্কো এবার ভূত দেখার জন্য জিদ ধরল। রাজপ্রাসাদের কর্মচারীরা যতই অনুনয়-বিনয় করে তাকে গদির ভেতরকার স্প্রিংয়ের কথা বলল, ততই ভূত সম্পর্কে তার সন্দেহ বাড়ল। সে হুকুম করল সিংহাসনের গদি কেটে টুকরা টুকরা করে ভেতরের ভূত বের করে আনার জন্য। হুকুম তামিল হলো- ফোম, তুলা এবং স্প্রিং বের করে আনার পরও ডাকাত সর্দারের সন্দেহ দূর হলো না।
By born Criminal-এর রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের একটি ঘটনা ঘটেছিল ফ্রান্সে। এটিও অপরাধ বিজ্ঞানের পাঠ্য একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। যিনি রাজ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলেন, তিনি বংশপরম্পরায় একজন পাকা এবং দাগি চোর ছিলেন। রাজা হওয়ার পরও তার চুরির অভ্যাস গেল না। তার কাছে আগত অন্য অঞ্চলের রাজা কিংবা রাজ কর্মচারীদের কিছু না কিছু তার চুরি করা চাই-ই। প্রাসাদের মধ্যে রাতের অাঁধারে ঘুরে বেড়াতেন চুরি করার জন্য। প্রাসাদরক্ষী কিংবা অন্দর মহলের দাসীবান্দীদের জিনিসপত্রও চুরি করতেন। যেহেতু রাজা স্বয়ং চুরি করছেন সেহেতু সবাই না দেখার ভান করত। রাজা মনে মনে নিজের চুরিবিদ্যা সম্পর্কে খুবই আস্থাশীল হয়ে পড়লেন। কারণ কেউ তার চুরি ধরতে পারেনি বলেই তার বিশ্বাস। এবার তিনি প্রাসাদের বাইরে চুরি আরম্ভ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। রাজার পাত্র-মিত্ররা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। তারা অনেক পরামর্শ করে একটি ক্ষতিপূরণ প্রদান কমিটি করল যার প্রধান দায়িত্ব হবে রাজা যেসব স্থানে চুরি করবেন সেসব স্থানে আগেই সতর্ক করে দেওয়া। ফলে তারা রাজার চুরির কর্মে কোনো বাধা প্রদান করবে না। বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ কমিটি থেকে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ পাবে। অন্যদিকে রাজা এসবের কিছুই জানল না। মনের আনন্দে রাজা চুরি করতে বের হতো হররোজ। বিশেষ করে বড় বড় বিপণিবিতানগুলো ছিল তার লক্ষ্যস্থল। ক্ষতিপূরণ কমিটির লোকজনও তাকে অনুসরণ করত ছায়ার মতো। একদিকে রাজা চুরি করতেন, অন্যদিকে ক্ষতিপূরণ কমিটির লোক চুরির স্থান, মাল ইত্যাদির তালিকা তৈরি করে যথাযথ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করত। সমসাময়িক রাজনীতিতে এটি কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা না হলেও অপরাধ বিজ্ঞানের একটি মজাদার অধ্যায় হিসেবে অপরাধ বিজ্ঞানীদের জ্ঞানের খোরাক জোগাচ্ছে। এবার আসি আল্লাহর সৌজন্যবোধ প্রসঙ্গে। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আশরাফুল মাখলুকাত বা সেরা জীব হিসেবে। শারীরিক গঠন এবং চিন্তা-চেতনার উকৃষ্ট রূপের জন্যই মানুষ শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তার ইচ্ছামাফিক ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছেন। রাজনৈতিক ক্ষমতা, বংশ এবং বিত্ত-বৈভবের মাধ্যমে কাউকে কাউকে বিশেষভাবে মর্যাদাবান করেছেন। আল্লাহ একবার যাকে মর্যাদাবান করেন তাকে অমর্যাদাকর অবস্থায় ফেলেন না যতক্ষণ না পর্যন্ত ওই ব্যক্তি তার নিজস্ব কর্মযোগে নিজের পতন না ডেকে নিয়ে আসেন। আর এখানেই মানব চরিত্রের এক অদ্ভুত দিক উন্মোচিত হয়েছে সমাজবিজ্ঞানীদের কাছে।
মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হলো কারও না কারও কাছে মাথানত করা। আরবিতে একে বলা হয় এজহারে তাজাল্লুল। এই মাথা যদি আল্লাহর কাছে নত হয় তাহলে বিশ্বভুবনে মানুষের তেমন কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু মাথাটি যদি আল্লাহর কোনো বান্দার কাছে নত হয় তখনই শুরু হয় বিপত্তি। যিনি নত করেন তিনি আর সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ থাকেন না। হয়ে যান মানুষরূপী অন্য কিছু। অন্যদিকে যার কাছে নত করা হয় তিনি এ আনুগত্য পেতে পেতে তার নফসের খপ্পরে পড়ে যান। যাকে বলা হয় নফসে আম্মারা। শয়তানের চেয়েও ভয়ঙ্কর এই নফসটি। ফলে ক্ষমতাবান লোকটি এক সময় নিজেকে মহাক্ষমতাধর ভাবতে থাকেন। পৃথিবীর অনেক শাসক এভাবেই নিজেকে একসময় প্রকাশ্যে আল্লাহ বলে ঘোষণা করেছিল। পরিণতি জঘন্যভাবে পতন। মানুষের মধ্যে যারা সাধারণত সুপার কোয়ালিটির হন তারাই কিন্তু এ বিপত্তিতে পড়েন। ইতিহাসের ফেরাউন, ফাতেমী সম্রাট আল মুইজ কিংবা ভারতের সম্রাট আকবর- তারা সবাই কিন্তু মানুষ এবং শাসক হিসেবে ছিলেন অতি উত্তম।
শাসকদের একমাত্র আরাধ্য থাকে- সবার কাছ থেকেই সীমাহীন আনুগত্য লাভের আকাঙ্ক্ষা। বিশেষ করে সর্বজন শ্রদ্ধেয়, জ্ঞানী এবং যোগ্য মানুষের আনুগত্য তাদের খুবই পছন্দ। কিন্তু জ্ঞানী ও সাধু লোকেরা আবার কারও আনুগত্য করতে চান না। ফলে পৃথিবীর রাজনীতির ইতিহাসে সৎ সজ্জন ও জ্ঞানী লোকদের সঙ্গে শাসকদের দ্বন্দ্ব-চিরায়ত একটি উপাখ্যান। ফলে শাসকদের দ্বারা অনেক পণ্ডিত ও সাধু ব্যক্তি নিগৃহীত বা ক্ষেত্রবিশেষে নিহত হয়েছেন। আবার Devine Justice-এর পাল্লায় পড়ে অনেক শাসক হারিয়েছেন জীবন, রাজ্যপাটসহ সবকিছু। ইতিহাসের একটি সত্য ঘটনা বলে লেখাটি শেষ করব।
সময়টি ত্রয়োদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি। দিল্লীতে তখন তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা গিয়াস উদ্দিন তুঘলকের রাজত্ব। তার পুত্র মুহাম্মদ বিন তুঘলক ইতিহাসের পাগলা রাজা নামে সমধিক পরিচিত। ওই যুগে দিল্লীতে বাস করতেন বিখ্যাত দরবেশ নিজাম উদ্দিন আউলিয়া, পুরনো দিল্লীর মেহরুলিতে তিনি বহু বছর ধরে বাস করছিলেন সেই সম্রাট গিয়াস উদ্দিন বলবনের আমল থেকে। সুলতান বলবন থেকে সুলতান গিয়াস উদ্দিন তুঘলক পর্যন্ত কত সম্রাট এলো আর গেল সেই হিসাব নিজাম উদ্দিন আউলিয়া রাখতেন না। সব শাসকের একমাত্র আরাধ্য ছিল নিজাম উদ্দিন আউলিয়াকে দরবারে এনে আনুগত্য দাবি করা। কিন্তু দরবেশ কোনো শাসকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দরবারে যেতেন না। আবার শাসকরাও তাকে বিরক্ত করার সাহস দেখাতেন না। এভাবেই চলছিল। কিন্তু সম্রাট গিয়াস উদ্দিন তুঘলক সিংহাসনে বসেই ঘটালেন ব্যতিক্রমী ঘটনা। তিনি দরবেশকে সমন দিলেন দরবারে উপস্থিত হয়ে আনুগত্য প্রকাশের জন্য। দরবেশ এলেন না। সম্রাট সিদ্ধান্ত নিলেন হাতকড়া পরিয়ে দরবেশকে গ্রেফতার করে টানতে টানতে দিলি্লর দরবারে নিয়ে আসবেন। এর মধ্যেই হঠাৎ করে খবর এলো দোয়ার অঞ্চলের কৃষকরা বিদ্রোহ করেছে। সম্রাট সসৈন্যে বিদ্রোহ দমনে বেরিয়ে পড়লেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যে তিনি সফলতার সঙ্গে বিদ্রোহ দমন করে দিলি্ল অভিমুখে রওনা করলেন এবং রাজধানীর ২০ মাইল দূরবর্তী একটি এলাকায় তাঁবু গাড়লেন। সম্রাট এবার দিলি্লর কোতোয়াল অর্থাৎ পুলিশপ্রধানকে নির্দেশ পাঠালেন নিজাম উদ্দিন আউলিয়াকে গ্রেফতার করে পরের দিন রাজদরবারে হাজির করার জন্য। সম্রাটের উদ্ধত অহংকার দোয়ারের যুদ্ধজয়ের কাল বহু গুণে বৃদ্ধি পেল এবং এই উচ্ছ্বাস তিনি উপভোগ করতে চাইলেন দরবেশকে অপমানিত ও নির্যাতন করার মাধ্যমে।
সম্রাটের আদেশ পেয়ে দিলি্লর পুলিশপ্রধান শুরু করলেন কান্না। কারণ তিনি ছিলেন দরবেশের ভক্ত। কাঁদতে কাঁদতে তিনি দরবেশের দরবারে সম্রাটের ফরমান নিয়ে উপস্থিত হলেন। দরবেশ সব শুনলেন এবং নির্লিপ্ত রইলেন, কোনো জবাব দিলেন না। উৎকণ্ঠিত পুলিশপ্রধান আরজ করলেন হুজুর, সম্রাট দিল্লী থেকে মাত্র ২০ মাইল দূরে অবস্থান করছেন। কাল সকালের মধ্যেই রাজধানীতে এসে পেঁৗছবেন! এখন আমি কি করব। হুজুর উত্তর করলেন- চিন্তা কর না বেটা। বাড়ি যাও নিশ্চিন্তে ঘুমাও, দিল্লী বহুৎ দূর হ্যায়।
পরবর্তী ইতিহাস সবারই জানা। সম্রাট খুব ভোরে দিল্লীর উদ্দেশে রওনা দিলেন। সম্রাটের পুত্র জুনা খান ওরফে মুহাম্মদ বিন তুঘলক তার যুদ্ধজয়ী পিতাকে বিপুলভাবে সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য রাজধানীর উপকণ্ঠে বিশাল ও বর্ণিল তোরণ নির্মাণ করে হাজার হাজার দিলি্লবাসী নাগরিক, সৈন্য সামন্ত ও উজির-নাজিরদের নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন। সম্রাট এলেন। যেই মুহূর্তে তিনি সেই বিশাল তোরণ অতিক্রম করছিলেন সেই মুহূর্তেই তা সম্রাটের মাথার ওপর ভেঙে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গেই সম্রাটের মৃত্যু হলো। দিল্লী তার কাছ থেকে দূরেই থেকে গেল।
লেখক : গোলাম মাওলা রনি, এমপি
সব ধর্মের বিশ্বাসীরাই মনে করেন জগৎসমূহের সৃষ্টিকর্তা হলেন আল্লাহ। এ অনন্ত মহাবিশ্বের সব প্রাণী ইচ্ছায় হোক কিংবা অনিচ্ছায় হোক আল্লাহর আওতার বাইরে যেতে পারে না। আল্লাহ তার সৃষ্টির মধ্যেই স্বকীয় সত্তায় উপস্থিত। চিন্তাশীলদের কাছেও তিনি সমুজ্জ্বল। তিনি তার সৃষ্টির মধ্যে কর্মকুশলতায়, সৌন্দর্য, সৌকর্য এবং সৌজন্যবোধের অপার মহিমায় এমনভাবে ভাস্বর হয়ে আছেন যা মানুষমাত্রই বুঝতে পারে এবং সে মতে তারা তাদের কর্মপদ্ধতি ঠিক করে নেয়। আল্লাহ তাদেরকেই বলেছেন দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকামী মানুষ।
আমাদের রাজনীতি, সমাজনীতি এবং পারিবারিক মূল্যবোধের জায়গাটি বার বার আঘাতপ্রাপ্ত হয় প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তিবর্গের দ্বারা। যিনি ক্ষমতাশালী প্রধান ব্যক্তিতে পরিণত হন, তার প্রধান ও প্রথম দায়িত্বই হয় অপরাধ, অপমান ও লাঞ্ছিত করে আত্দতৃপ্তি লাভের অপপ্রয়াস চালানো। ফলে একজন বড় হতে থাকে এবং অন্যরা ছোট হতে থাকে। বড় হতে হতে তার আকাঙ্ক্ষা আকাশের মালিক হওয়ার স্বপ্ন পর্যন্ত পেঁৗছে। অন্যদিকে যিনি ছোট হন, তিনি ছোট হতে হতে পা লেহনকারী কুকুর না হয়ে ক্ষান্ত হন না। প্রথমে বাধ্য হয়ে হয়তো ছোট হন কিন্তু পরে ইচ্ছা করেই ছোট হন। নিজেকে বড় করার জন্য মানুষের সবচেয়ে জঘন্য হাতিয়ার হলো অত্যাচার। কখনো অত্যাচার করা হয় অস্ত্রের মাধ্যমে আবার কখনো করা হয় ঘুষের মাধ্যমে। আল্লাহপাক আমাদের জিহ্বা তৈরি করেছেন একখণ্ড নরম ও সাবলীল মাংস দিয়ে। কিন্তু আমরা এই নরম জিহ্বা দিয়ে প্রায়ই কুড়াল, কোদাল কিংবা তরবারির কাজ করে থাকি।
হিন্দুরা যে তেত্রিশ কোটি দেবতা বিশ্বাস করে থাকেন তাদের অন্যতম শ্রীকৃষ্ণ। মহাভারতে আমরা শ্রীকৃষ্ণের উপাখ্যান জেনেছি। শ্রীকৃষ্ণ বলেন, মানুষ অত্যাচার করতে করতে এক সময় নিজেকে ভগবান ভাবতে শুরু করে। অন্যদিকে মানুষ অত্যাচারিত হতে হতে যখন আর কোনো আশ্রয় পায় না তখন অত্যাচারীদের ভগবান ভাবতে শুরু করে। পরিস্থিতি যখন এরূপ হয় তখনই অবতার হিসেবে আমি আবির্ভূত হই। অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব হয়। এখানে আবির্ভাব অর্থটি রূপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ কখনো সশরীরে স্রষ্টার প্রতিনিধি আসেন আবার কখনো স্রষ্টার বিচার জমিনে আবির্ভূত হয়। ইংরেজিতে আমরা এ বিচারকে বলি Devine Justice। জমিনে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় সৃষ্টি করে মন্দ শাসকরা। তারা তাদের অযোগ্য সঙ্গী-সাথীদের দ্বারা যুগপৎভাবে বহুমুখী অত্যাচারের মাধ্যমে জনজীবন অতিষ্ঠ করে তোলেন। মন্দ শাসকের সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো তার অযোগ্য সঙ্গী-সাথী বা পাত্রমিত্র। আর এখানেই আল্লাহর শিক্ষা কিন্তু ভিন্ন। প্রকৃতিতে আল্লাহ তার সৃষ্টির মধ্যে এমন ইকো ব্যালেন্স করেছেন যে, সহজেই তার মাহাত্দ্য, সৌন্দর্যপ্রিয়তা এবং সৌজন্যতার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠে। উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
প্রকৃতির অন্যতম সৌন্দর্য হলো ফুল। সৌন্দর্যমণ্ডিত পুষ্পকাননে পুরুষ ফুল এবং স্ত্রী ফুলের মধ্যে পরাগায়ন ঘটানোর জন্য আল্লাহ প্রজাপতিকে নিয়োগ করেছেন। ফুলের ওপর যখন হাজার হাজার প্রজাতির প্রজাপতি সকাল-সন্ধ্যা উড়ে বেড়ায় সেই দৃশ্য চিত্রায়িত করে কেউ হলেন মহান চিত্রশিল্পী, চলচ্চিত্রকার কিংবা নিদেনপক্ষে ফটোগ্রাফার। কবিরা অনাদিকাল থেকে কবিতা লিখছেন। লেখকরা লিখছেন গল্প, উপন্যাসসহ হরেক রকম সাহিত্য। অন্যদিকে মানুষের মলমূত্র ধ্বংস করার জন্য আল্লাহপাক যেসব পোকা-মাকড় বা জীবাণু সৃষ্টি করেছেন সেগুলোর আকার-আকৃতি কল্পনা করুন তো! মলমূত্রের পোকা-মাকড় যদি ফুলের পরাগায়ন ঘটাত এবং প্রজাপতি যদি মানুষের মলমূত্র খেত- এ জঘন্য দৃশ্য দেখে কেউ কি আল্লাহর প্রশংসা করত? এবার একটু প্রাণীকুলের দিকে তাকাই। যেসব বন্যপ্রাণী হিংস নয় এবং দেখতে সুন্দর তাদের খাদ্যাভ্যাস, বসবাস করার পদ্ধতি কিন্তু অন্যদের থেকে আলাদা। যেমন হরিণ। কিন্তু যাদের আমরা ঘৃণা করি সেই শূকর কিংবা কুকুর কি কি খায়? তাদের খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা এবং ব্যবহারই তাদেরকে আমাদের কাছে ঘৃণিত করে তোলে।
এবার মানুষ প্রসঙ্গে আসি। মানুষ যখন তার মানবীয় গুণাবলীর পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারে তখন জমিন থেকে আসমান পর্যন্ত তার প্রশংসা ছড়িয়ে পড়ে। জমিনের মানুষ প্রশংসা করে। আসমানে করেন ফেরেশতারা। তিনি যখন জমিনে হাঁটাচলা করেন তখন অপরাপর সৃষ্টি তার জন্য দোয়া করতে থাকে। অথচ এ একই মানুষই যখন মন্দ কাজ করতে করতে এমন পারঙ্গমতা অর্জন করে যে, ইবলিশ শয়তানও স্তব্ধ হয়ে ভাবতে থাকে 'ও' এ শয়তানি শিখল কি করে। মানুষের মধ্যে ইদানীং বিশ্বব্যাপী সমকামিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ সমকামিতা কি জিনিস তা শয়তানও জানে না। এমনকি শিয়াল, কুকুর, গরু-গাধাও সমকামিতা করে না। মানুষের দুটি খারাপ দিক নিয়েই সাধারণত বেশি আলোচনা হয়- একটি আচরণগত, অর্থাৎ ব্যবহারিক। সাধারণ বাংলায় বলে ওর ব্যবহার খারাপ বা চোপা খারাপ। অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে চোখ পাকিয়ে মানুষকে কষ্ট দেয়। অন্যটি হলো আজেবাজে এবং অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করে মানুষকে কষ্ট দেয়। লোকে বলে- ওর চোপা খারাপ। অর্থাৎ মুখ খারাপ। কিন্তু মানুষের সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো অশ্লীল চিন্তা বা চেতনা। বিশ্বের তাবৎ মাখলুকাত অর্থাৎ সৃষ্টিকূলের মধ্যে কেবলমাত্র মানুষই স্বাধীনভাবে ভালো-মন্দ চিন্তা করার অধিকারী। অবচেতন মনে মানুষ যেসব খারাপ চিন্তা করে তা-ই পরবর্তীতে সে কোনো না কোনোভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করে। এটা যে কত ভয়াবহ ও জঘন্য হতে পারে তার একটি উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে। এটি সাম্প্রতিককালের বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী কলঙ্কময় ঘটনাগুলোর একটি। ঘটেছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে। একটি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে কয়েকজন কোরীয় ও চীনা যুবক থাকেন। সামনের ফ্ল্যাটে থাকেন আরব দেশীয় একজোড়া দম্পতি। তাদের ছিল পাঁচ বছরের একটি অনিন্দ্যসুন্দরী কন্যাসন্তান। এ নাবালিকা কন্যাটি প্রতিদিন বিকালে অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের সামনের পার্কটিতে অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে খেলাধুলা করত। কোরীয় ও চাইনিজ যুবকরা প্রায়ই বাচ্চাদের খেলা দেখত এবং এক পর্যায়ে ওই বাচ্চাটির প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হলো। বাচ্চাটির ছন্দময় গতি অসাধারণ সৌন্দর্য এবং সুন্দর স্বাস্থ্যের দিকে তারা বিশেষভাবে নজর দিল। নিজেরা বাচ্চাটিকে নিয়ে অনেক আলোচনা করল এবং মনে মনে ভাবল এই সুন্দর বাচ্চাটির মাংস খেতে না জানি কত মজা লাগবে। যে রকম চিন্তা সেই রকম কাজ। তারা সুযোগমতো বাচ্চাটিকে অপহরণ করল এবং ঠিকই জবাই করে তার মাংস রান্না করল এবং শেষমেশ খেলো। ওই যুবকদের একজনের হঠাৎ করেই পেট ব্যথা শুরু হলো এবং যথারীতি হাসপাতালে নেওয়া হলো। ডাক্তার প্রচলিত ওষুধ দিয়ে কিছুতেই ব্যথা উপশম করতে পারছিলেন না। অবশেষে বমি করানো হলো। ফলে পেটের ভেতর থেকে পরিপাক না হওয়া খাদ্যদ্রব্য বের হয়ে এলো, যার মধ্যে ছিল ওই শিশুটির মাংস। পরবর্তীতে ডাক্তাররা পরীক্ষার মাধ্যমে যখন জানতে পারলেন, মাংসের টুকরাগুলো মানুষের তখন পুলিশে খবর দিলেন এবং আসল সত্য এমনি করেই প্রকাশ হয়ে পড়ল বিশ্বব্যাপী।
মানুষের এই চিন্তা এবং আচরণগত ভিন্নতা নির্ণীত হয় এবং নিয়ন্ত্রিত হয় জিনের মাধ্যমে। জিন মানে এক ধরনের জীব কোষ, যা কিনা হাজার হাজার বছর ধরে মানব শরীরে বংশপরম্পরায় বাহিত হয়ে থাকে। এ জন্য বড় কোনো পদ বা পদবিতে ভালো বংশের লোক খোঁজা হয়। কারণ জেনেটিক থিওরি অনুযায়ী ভালো জিনের অধিকারী মানুষ খারাপ কাজ করতে পারে না। অন্যদিকে জিনগত ত্রুটি থাকলে মানুষ তার প্রভাবে খারাপ কাজটি এক সময় না একসময় করে ফেলবেই। অপরাধ বিজ্ঞানে (Criminology) একটি অধ্যায় রয়েছে By born Criminal- বাংলায় অর্থ দাঁড়ায় 'যাদের জন্মই হয় অপরাধ করার জন্য'। এই থিওরি মতে, অপরাধীরা তাদের শরীরে অপরাধ-সংক্রান্ত জিন বহন করার পাশাপাশি কিছু বিশেষ শারীরিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়ে থাকে। যেমন এদের মুখমণ্ডল, ঠোঁট, আঙ্গুলের আকৃতি, নখ, চোখ, চোখের ভ্রু, পায়ের গঠন ইত্যাদি অস্বাভাবিক হয়ে থাকে। এসব লোক কখনো কখনো পেশাদার অপরাধী হিসেবে কাজ করে আবার কখনো কখনো ভদ্র বেশে সমাজের অপরাপর মানুষের সঙ্গে সাধারণ বেশে মিলে-মিশে থাকে। কিন্তু সময় ও সুযোগ বুঝে সে তার অপরাধমূলক কাজটি ঠিকই করে বসে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় এ প্রকৃতির মানুষ রাষ্ট্রক্ষমতার শীর্ষ পর্যায়ে বসলে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে আফগানিস্তানে হঠাৎ করেই একজন পেশাদার ডাকাত রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে বসে। নাম তার দস্যু বাচ্চা ই সাক্কো। এমন অদ্ভুত ঘটনা ইতিহাসে খুব কমই ঘটে। এ ডাকাত যখন আফগানিস্তানের শাসক হলো তখন সারা দেশকে একটি পাগলা গারদ বানিয়ে ফেলল। সে লেখাপড়া জানত না। শহরের আধুনিক জীবনযাপন সম্পর্কেও তার কোনো ধারণা ছিল না। মূলত দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে পথের বাঁকে বাঁকে ওত পেতে থেকে সে ডাকাতি করত। এভাবেই সে হঠাৎ কাবুলে উপস্থিত হয়। সেখানে তখন চলছিল দারুণ বিশৃঙ্খলা। ডাকাত দল হাঁটতে হাঁটতে রাজপ্রাসাদের দিকে এগুতে থাকে এবং কেবলমাত্র ডাকাতির উদ্দেশ্যেই অনেকটা অরক্ষিত প্রাসাদে ঢুকে পড়ে এবং আরব্য উপন্যাসের আলী বাবার মতো সিংহাসনে গিয়ে বসে। কিন্তু সিংহাসনে বসেই সে লাফ দিয়ে সরে আসে। বসার স্থানটিকে আরামদায়ক করার জন্য স্প্রিং লাগানো ছিল। ফলে দস্যু সাক্কো যখন স্প্রিংয়ের গদিওয়ালা সিংহাসনে লাফ দিয়ে বসল তখন গদির ভেতরকার স্প্রিংগুলো তাকে সজোরে ঝাঁকি মারল। ওরে বাবারে বলে সে লাফ দিয়ে সিংহাসন থেকে সরে এলো। মনে করল সিংহাসনের মধ্যে ভূত রয়েছে। ডাকাত সর্দার সাক্কো এবার ভূত দেখার জন্য জিদ ধরল। রাজপ্রাসাদের কর্মচারীরা যতই অনুনয়-বিনয় করে তাকে গদির ভেতরকার স্প্রিংয়ের কথা বলল, ততই ভূত সম্পর্কে তার সন্দেহ বাড়ল। সে হুকুম করল সিংহাসনের গদি কেটে টুকরা টুকরা করে ভেতরের ভূত বের করে আনার জন্য। হুকুম তামিল হলো- ফোম, তুলা এবং স্প্রিং বের করে আনার পরও ডাকাত সর্দারের সন্দেহ দূর হলো না।
By born Criminal-এর রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের একটি ঘটনা ঘটেছিল ফ্রান্সে। এটিও অপরাধ বিজ্ঞানের পাঠ্য একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। যিনি রাজ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলেন, তিনি বংশপরম্পরায় একজন পাকা এবং দাগি চোর ছিলেন। রাজা হওয়ার পরও তার চুরির অভ্যাস গেল না। তার কাছে আগত অন্য অঞ্চলের রাজা কিংবা রাজ কর্মচারীদের কিছু না কিছু তার চুরি করা চাই-ই। প্রাসাদের মধ্যে রাতের অাঁধারে ঘুরে বেড়াতেন চুরি করার জন্য। প্রাসাদরক্ষী কিংবা অন্দর মহলের দাসীবান্দীদের জিনিসপত্রও চুরি করতেন। যেহেতু রাজা স্বয়ং চুরি করছেন সেহেতু সবাই না দেখার ভান করত। রাজা মনে মনে নিজের চুরিবিদ্যা সম্পর্কে খুবই আস্থাশীল হয়ে পড়লেন। কারণ কেউ তার চুরি ধরতে পারেনি বলেই তার বিশ্বাস। এবার তিনি প্রাসাদের বাইরে চুরি আরম্ভ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। রাজার পাত্র-মিত্ররা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। তারা অনেক পরামর্শ করে একটি ক্ষতিপূরণ প্রদান কমিটি করল যার প্রধান দায়িত্ব হবে রাজা যেসব স্থানে চুরি করবেন সেসব স্থানে আগেই সতর্ক করে দেওয়া। ফলে তারা রাজার চুরির কর্মে কোনো বাধা প্রদান করবে না। বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ কমিটি থেকে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ পাবে। অন্যদিকে রাজা এসবের কিছুই জানল না। মনের আনন্দে রাজা চুরি করতে বের হতো হররোজ। বিশেষ করে বড় বড় বিপণিবিতানগুলো ছিল তার লক্ষ্যস্থল। ক্ষতিপূরণ কমিটির লোকজনও তাকে অনুসরণ করত ছায়ার মতো। একদিকে রাজা চুরি করতেন, অন্যদিকে ক্ষতিপূরণ কমিটির লোক চুরির স্থান, মাল ইত্যাদির তালিকা তৈরি করে যথাযথ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করত। সমসাময়িক রাজনীতিতে এটি কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা না হলেও অপরাধ বিজ্ঞানের একটি মজাদার অধ্যায় হিসেবে অপরাধ বিজ্ঞানীদের জ্ঞানের খোরাক জোগাচ্ছে। এবার আসি আল্লাহর সৌজন্যবোধ প্রসঙ্গে। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আশরাফুল মাখলুকাত বা সেরা জীব হিসেবে। শারীরিক গঠন এবং চিন্তা-চেতনার উকৃষ্ট রূপের জন্যই মানুষ শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তার ইচ্ছামাফিক ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছেন। রাজনৈতিক ক্ষমতা, বংশ এবং বিত্ত-বৈভবের মাধ্যমে কাউকে কাউকে বিশেষভাবে মর্যাদাবান করেছেন। আল্লাহ একবার যাকে মর্যাদাবান করেন তাকে অমর্যাদাকর অবস্থায় ফেলেন না যতক্ষণ না পর্যন্ত ওই ব্যক্তি তার নিজস্ব কর্মযোগে নিজের পতন না ডেকে নিয়ে আসেন। আর এখানেই মানব চরিত্রের এক অদ্ভুত দিক উন্মোচিত হয়েছে সমাজবিজ্ঞানীদের কাছে।
মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হলো কারও না কারও কাছে মাথানত করা। আরবিতে একে বলা হয় এজহারে তাজাল্লুল। এই মাথা যদি আল্লাহর কাছে নত হয় তাহলে বিশ্বভুবনে মানুষের তেমন কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু মাথাটি যদি আল্লাহর কোনো বান্দার কাছে নত হয় তখনই শুরু হয় বিপত্তি। যিনি নত করেন তিনি আর সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ থাকেন না। হয়ে যান মানুষরূপী অন্য কিছু। অন্যদিকে যার কাছে নত করা হয় তিনি এ আনুগত্য পেতে পেতে তার নফসের খপ্পরে পড়ে যান। যাকে বলা হয় নফসে আম্মারা। শয়তানের চেয়েও ভয়ঙ্কর এই নফসটি। ফলে ক্ষমতাবান লোকটি এক সময় নিজেকে মহাক্ষমতাধর ভাবতে থাকেন। পৃথিবীর অনেক শাসক এভাবেই নিজেকে একসময় প্রকাশ্যে আল্লাহ বলে ঘোষণা করেছিল। পরিণতি জঘন্যভাবে পতন। মানুষের মধ্যে যারা সাধারণত সুপার কোয়ালিটির হন তারাই কিন্তু এ বিপত্তিতে পড়েন। ইতিহাসের ফেরাউন, ফাতেমী সম্রাট আল মুইজ কিংবা ভারতের সম্রাট আকবর- তারা সবাই কিন্তু মানুষ এবং শাসক হিসেবে ছিলেন অতি উত্তম।
শাসকদের একমাত্র আরাধ্য থাকে- সবার কাছ থেকেই সীমাহীন আনুগত্য লাভের আকাঙ্ক্ষা। বিশেষ করে সর্বজন শ্রদ্ধেয়, জ্ঞানী এবং যোগ্য মানুষের আনুগত্য তাদের খুবই পছন্দ। কিন্তু জ্ঞানী ও সাধু লোকেরা আবার কারও আনুগত্য করতে চান না। ফলে পৃথিবীর রাজনীতির ইতিহাসে সৎ সজ্জন ও জ্ঞানী লোকদের সঙ্গে শাসকদের দ্বন্দ্ব-চিরায়ত একটি উপাখ্যান। ফলে শাসকদের দ্বারা অনেক পণ্ডিত ও সাধু ব্যক্তি নিগৃহীত বা ক্ষেত্রবিশেষে নিহত হয়েছেন। আবার Devine Justice-এর পাল্লায় পড়ে অনেক শাসক হারিয়েছেন জীবন, রাজ্যপাটসহ সবকিছু। ইতিহাসের একটি সত্য ঘটনা বলে লেখাটি শেষ করব।
সময়টি ত্রয়োদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি। দিল্লীতে তখন তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা গিয়াস উদ্দিন তুঘলকের রাজত্ব। তার পুত্র মুহাম্মদ বিন তুঘলক ইতিহাসের পাগলা রাজা নামে সমধিক পরিচিত। ওই যুগে দিল্লীতে বাস করতেন বিখ্যাত দরবেশ নিজাম উদ্দিন আউলিয়া, পুরনো দিল্লীর মেহরুলিতে তিনি বহু বছর ধরে বাস করছিলেন সেই সম্রাট গিয়াস উদ্দিন বলবনের আমল থেকে। সুলতান বলবন থেকে সুলতান গিয়াস উদ্দিন তুঘলক পর্যন্ত কত সম্রাট এলো আর গেল সেই হিসাব নিজাম উদ্দিন আউলিয়া রাখতেন না। সব শাসকের একমাত্র আরাধ্য ছিল নিজাম উদ্দিন আউলিয়াকে দরবারে এনে আনুগত্য দাবি করা। কিন্তু দরবেশ কোনো শাসকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দরবারে যেতেন না। আবার শাসকরাও তাকে বিরক্ত করার সাহস দেখাতেন না। এভাবেই চলছিল। কিন্তু সম্রাট গিয়াস উদ্দিন তুঘলক সিংহাসনে বসেই ঘটালেন ব্যতিক্রমী ঘটনা। তিনি দরবেশকে সমন দিলেন দরবারে উপস্থিত হয়ে আনুগত্য প্রকাশের জন্য। দরবেশ এলেন না। সম্রাট সিদ্ধান্ত নিলেন হাতকড়া পরিয়ে দরবেশকে গ্রেফতার করে টানতে টানতে দিলি্লর দরবারে নিয়ে আসবেন। এর মধ্যেই হঠাৎ করে খবর এলো দোয়ার অঞ্চলের কৃষকরা বিদ্রোহ করেছে। সম্রাট সসৈন্যে বিদ্রোহ দমনে বেরিয়ে পড়লেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যে তিনি সফলতার সঙ্গে বিদ্রোহ দমন করে দিলি্ল অভিমুখে রওনা করলেন এবং রাজধানীর ২০ মাইল দূরবর্তী একটি এলাকায় তাঁবু গাড়লেন। সম্রাট এবার দিলি্লর কোতোয়াল অর্থাৎ পুলিশপ্রধানকে নির্দেশ পাঠালেন নিজাম উদ্দিন আউলিয়াকে গ্রেফতার করে পরের দিন রাজদরবারে হাজির করার জন্য। সম্রাটের উদ্ধত অহংকার দোয়ারের যুদ্ধজয়ের কাল বহু গুণে বৃদ্ধি পেল এবং এই উচ্ছ্বাস তিনি উপভোগ করতে চাইলেন দরবেশকে অপমানিত ও নির্যাতন করার মাধ্যমে।
সম্রাটের আদেশ পেয়ে দিলি্লর পুলিশপ্রধান শুরু করলেন কান্না। কারণ তিনি ছিলেন দরবেশের ভক্ত। কাঁদতে কাঁদতে তিনি দরবেশের দরবারে সম্রাটের ফরমান নিয়ে উপস্থিত হলেন। দরবেশ সব শুনলেন এবং নির্লিপ্ত রইলেন, কোনো জবাব দিলেন না। উৎকণ্ঠিত পুলিশপ্রধান আরজ করলেন হুজুর, সম্রাট দিল্লী থেকে মাত্র ২০ মাইল দূরে অবস্থান করছেন। কাল সকালের মধ্যেই রাজধানীতে এসে পেঁৗছবেন! এখন আমি কি করব। হুজুর উত্তর করলেন- চিন্তা কর না বেটা। বাড়ি যাও নিশ্চিন্তে ঘুমাও, দিল্লী বহুৎ দূর হ্যায়।
পরবর্তী ইতিহাস সবারই জানা। সম্রাট খুব ভোরে দিল্লীর উদ্দেশে রওনা দিলেন। সম্রাটের পুত্র জুনা খান ওরফে মুহাম্মদ বিন তুঘলক তার যুদ্ধজয়ী পিতাকে বিপুলভাবে সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য রাজধানীর উপকণ্ঠে বিশাল ও বর্ণিল তোরণ নির্মাণ করে হাজার হাজার দিলি্লবাসী নাগরিক, সৈন্য সামন্ত ও উজির-নাজিরদের নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন। সম্রাট এলেন। যেই মুহূর্তে তিনি সেই বিশাল তোরণ অতিক্রম করছিলেন সেই মুহূর্তেই তা সম্রাটের মাথার ওপর ভেঙে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গেই সম্রাটের মৃত্যু হলো। দিল্লী তার কাছ থেকে দূরেই থেকে গেল।
লেখক : গোলাম মাওলা রনি, এমপি
প্রকাশ : ২৬শে সেপ্টেম্বর ২০১২, বাংলাদেশ প্রতিদিন
Excellent.
ReplyDelete